গণঅধিকার পরিষদ সরকারের সকল দপ্তর থেকে ছাত্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দুপুরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ খাঁন এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বক্তব্য রাখেন। এ সময় দলের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ ও শাকিল উজ্জামানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা মার্কিন ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের বাংলাদেশ নিয়ে দেওয়া একটি বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান। গ্যাবার্ড দিল্লিতে একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ ও সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছিলেন। গণঅধিকার পরিষদ এই বক্তব্যকে ভিত্তিহীন আখ্যায়িত করে বলেছে, বাংলাদেশে কোন ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ নেই এবং সংখ্যালঘুদের উপর অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনা ঘটেনি। তারা ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার একটি জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হয়েছে।
গণঅধিকার পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেন, তারা ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে শুরু থেকেই সমর্থন জানিয়ে এসেছেন। তবে, সরকার সবার সাথে ইনসাফ না করে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর সরকার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিনজন ছাত্র উপদেষ্টার মধ্যে একজনের পদত্যাগ এবং একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হওয়ার প্রসঙ্গ উঠে আসে। গণঅধিকার পরিষদ মনে করে, একজন উপদেষ্টা পদত্যাগ করায় বাকি দুজন উপদেষ্টারও সরকারে থাকার নৈতিকতা নেই। তারা এই উপদেষ্টাদের নেক্সাস একই উল্লেখ করে সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে বাকি দুই ছাত্র উপদেষ্টারও পদত্যাগ দাবি করেন। একইসাথে, ছাত্ররা যেহেতু রাজনৈতিক দল গঠন করেছে, তাই সরকারের সকল সেক্টর ও দপ্তর থেকে ছাত্র প্রতিনিধিদের পদত্যাগ করা জরুরি বলে তারা মনে করেন।
ঢাকা ওয়াসায় আউটসোর্সিং নিয়োগ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে গণঅধিকার পরিষদ। তারা এই নিয়োগকে স্থায়ী নিয়োগের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে উল্লেখ করে এর তদন্ত এবং সরকারের সকল দপ্তরে নিয়োগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের দাবি জানান।
গণঅধিকার পরিষদ রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য সর্বপ্রথম উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের উপর জোর দেয়। তারা প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে বিতর্কিত ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে একটি নতুন উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের কথা বলেন। হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেন তারা।
দলটির নেতৃবৃন্দ গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও একটি রোডম্যাপ প্রণয়নের দাবি জানান। তারা প্রধান উপদেষ্টার পূর্বের বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করে ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কারের উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং এই লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যমতের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তবে, উপদেষ্টাদের বক্তব্যে জাতীয় ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে তারা মনে করেন।