ঋণের দায়ে জর্জরিত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর চলন্ত ট্রেনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নে ঋণের বোঝা সইতে না পেরে চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন মহরম আলী (৫৫) নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৩টায় সিলেটগামী আন্তঃনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে শমশেরনগর রেলস্টেশন এলাকায় এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিহত মহরম আলী হাজীপুর ইউনিয়নের চানগাঁও গ্রামের মৃত সোনা উল্যার ছেলে। তিনি পীরের বাজারের একজন মুদি দোকানী ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পীরের বাজারে মুদি ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রাজা মিয়া জানান, মহরম আলীর সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ধারণা করা হচ্ছে, ঋণের চাপ সহ্য করতে না পেরেই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।

নিহতের বড় ভাইয়ের স্ত্রী মালা বেগম জানান, মহরম আলীর উপর ২০ লক্ষ টাকার বেশি ঋণ ছিল। স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীদের (সুদখোর) ঋণের চাপ সইতে না পেরেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনার দিন স্থানীয় কয়েকজন সুদখোরের টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল। টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে সুদখোররা তাকে অপমানজনক কথা বলতো বলে জানান মালা বেগম।

স্থানীয়রা জানান, এলাকায় দাদন ব্যবসায়ীদের একটি শক্তিশালী চক্র গড়ে উঠেছে। এই চক্র অসহায় ও দরিদ্র মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে ঋণ দেয় এবং উচ্চ সুদ চাপিয়ে দেয়। ঋণের টাকা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকায় এক সময় ঋণগ্রহীতাদের পরিশোধের ক্ষমতা হারিয়ে যায়। ফলে অনেক পরিবার ভিটেমাটি হারাচ্ছে, আবার কেউ কেউ আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নীরব ভূমিকা থাকায় দাদন ব্যবসায়ীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার এসআই দীপক সরকার জানান, মহরম আলীর পরিবার জানিয়েছে তিনি ঋণগ্রস্ত ছিলেন। ঋণের চাপ সইতে না পেরেই তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছে। লাশের পাশ থেকে একটি কীটনাশকের বোতল ও একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।